পথে যেতে যেতে : পথচারী
- আপলোড সময় : ০২-০৯-২০২৫ ০৯:২০:২৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৯-২০২৫ ০৯:২০:২৬ পূর্বাহ্ন

এক সাংবাদিক বন্ধু হঠাৎ সেদিন প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন- দেশের পরিস্থিতি কেমন? একটু ভেবে জবাব দিলাম- ভালো না। বন্ধুটি পাল্টা প্রশ্ন করলেন- কেন? এবার আগে পিছে কিছু না ভেবেই বললাম- দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা।
এই সেদিন পুরান ঢাকায় সাধারণ এক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে যেভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হলো তা বলার ভাষা নেই। কথাগুলো বললে খুব বেশি হয়ে যায় এমন না। তবে বলতে বলতে অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। মানুষ এতো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে কেন? নির্দয়, নিষ্ঠুর; আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা! সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার কথাই বলছি। রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা বাড়ি রূপলাল দাসের (৪০), পেশা জুতা সেলাই। অপরজন নিকট আত্মীয় প্রদীপ দাস (৩৫), পেশায় ভ্যান চালক। গত ১০ আগস্ট উভয়কেই ‘ভ্যান চোর’ সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কেন? একইদিন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় যুবদল কর্মী জসীম উদ্দিন রনিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এমন আরও অনেক ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে চলেছে দেশব্যাপী।
দৈনিক পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কতটুকুবা আসে এমন সংবাদ? গত ১৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখ যশোরের সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদহি গ্রামের রেজাউল ইসলাম নামে এক যুবলীগ কর্মীকে নিজ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তার নামে যশোর কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলা হয়েছে আইন-আদালত রয়েছে এটিই স্বাভাবিক। অপরাধী যেমনই হোক মামলা হলে তাকে আইন দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেয়ার সংস্কৃতি ভালো লক্ষণ নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো দুর্বৃত্তরা ব্যাপক বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেন না ছিনতাই থেকে। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাদের উপায়ইবা কি? গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর কাওরান বাজারে ছিনতাইকারীর হামলায় আহত হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রটেকশন বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (বঙ্গভবন নিরাপত্তা) মো. সুমন রেজা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছিনতাই এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এই একটি ঘটনাই তা প্রমাণ করে।
গণমাধ্যমকর্মীদের কথা ভাবলে আরও অবাক হতে হয়। তারা তো কারো খায় না, কারো পরে না। নিজের খেয়ে তারা সমাজ ও দেশের কাজ করে থাকেন। নোয়াব (নিউজ পেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) ও টিআইবি এ নিয়ে সম্প্রতি কিছু গবেষণামূলক কাজ করেছে। তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন থেকেই দেখে আসছি- বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে যাচ্ছে। যে কোনো সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকে মানবাধিকারের বিষয়টি। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের প্রতি এই দাবি বেশি থাকে। অথচ নির্বাচিত সরকারের সময়ই এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত থাকে। এর প্রমাণ আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা একটু বেশি ছিল দেশবাসীর।
টিআইবি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন ও হয়রানির যে চিত্র সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। তথ্য বলছে গত এক বছরে অর্থাৎ আগস্ট/২৪ থেকে জুলাই/২৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রায় ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২৬৬ জনকে জুলাই/২০২৪ গণহত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে ৩ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে, ২৪ জন গণমাধ্যম কর্মীকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। আরও ভয়াবহ যে চিত্র তা হলো এ সময় ৮টি সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ১১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র আমরা জানতে পারি একমাত্র গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের জীবনের যে ঝুঁকি তা দেশবাসী ভালোই জানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিদুর্ঘটনা, সংঘর্ষ, রাজনৈতিক গ-গোল-মারামারি এ সকল ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের যে কষ্ট তা ব্যক্তিমাত্রই আমরা জানি। আমাদের দাবি- দেশের সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে কঠোর হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ